স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারত পাশে না দাঁড়ালে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো। শুধু তাই নয় তারা এক কোটি বাংলাদেশিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয় দিয়েছিল। তাই ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি শর্তহীন বন্ধুত্ব ছিল, যা এখনো বিদ্যমান। এখনো যেকোনো বিষয়ে ভারত সত্যিকার অর্থে আমাদের পাশে থাকে। ভারতকে আমরা সামনেও বন্ধু হিসেবে পাব।

ভারতকে সামনেও বন্ধু হিসেবে পাব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট আমরা বৃটিশ থেকে স্বাধীন হয়ে আরেক উপনিবেশে পড়ি। অনেক বঞ্চনা অবিচার আমরা সহ্য করেছি, তারা আমাদের ভাষাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন পাকিস্তান আমাদের নয়, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের আকাশচুম্বী মনোবল ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা পেরেছি। আমরা যেখানেই গিয়েছি, এ দেশের মানুষ সহায়তা করেছে বলে আমরা টিকতে পেরেছিলাম।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে চোখের ইশারায় সৈন্য প্রত্যাহার করে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এটার একমাত্র উদাহরণ আমার মনে হয় বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে আমাদের আনকন্ডিশনাল ফ্রেন্ডশিপ (শর্তহীন বন্ধুত্ব) আমাদের এখনও বিদ্যমান। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, ভবিষ্যতেও পাব। সেজন্যই হয়ত ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করে চলে গেল।

ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা সরাসরি যুদ্ধে আসল, এক-দুজন নয়, ১ হাজার ৬৬৮ সেনা আত্মহুতি দিয়েছে। এটা তাদের নিজ দেশের জন্য নয়, পাশের দেশের জন্য। সেজন্য তাদের স্যালুট জানাই। ধন্যবাদ জানাই, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ, ১ কোটি মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।’

অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সকল স্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও আত্মত্যাগে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। ভারতীয় সেনারা আমাদের সহযোগিতা করেছিল। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ যেদিন ভারতীয় সৈন্য ফিরে যায়, পরেরদিন পত্রপত্রিকায় ভারত-বাংলাদেশের চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বাহবা নিয়ে সেদিন ভারতীয় সৈন্যরা এ দেশ ছেড়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুত্ব চিরজীবন থাকবে। আমাদের উভয় দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। আমরা কঠিন সময়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করি। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব সবসময় বজায় থাকবে।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর প্রতীক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন সেনা সদর দপ্তরের কোয়ার্টার মাস্টার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।